আর্থার মিলারের নাটক 'ডেথ অব এ সেলসম্যান' | নির্দেশনা: আশিকুর রহমান লিয়ন | থিয়েটারিয়ান প্রযোজনা


আর্থার মিলারের নাটক 'ডেথ অব এ সেলসম্যান' | কাহিনী সংক্ষেপ

আর্থার মিলারের নাটক ডেথ অব এ সেলসম্যান পরিচয় হারানো এবং একজন মানুষের নিজের এবং সমাজের মধ্যে পরিবর্তনকে মেনে নেবার অক্ষমতাকে সম্বোধন করে আবর্তিত। নাটকটি স্মৃতি, স্বপ্ন, দ্বন্দ্ব এবং তর্কের একটি মিশ্র ছবি, যা সবই উইলি লোমানের জীবনের শেষ ২৪ ঘন্টা বর্ণনা করে। একজন ব্যর্থ বিক্রয়কর্মী যিনি আমেরিকান স্বপ্ন এবং কাজের নীতি সম্পর্কে বিকৃত ধারণা পেয়েছিলেন। নাটকটি তাঁর স্ত্রী, তাঁর ছেলে এবং তাঁর পরিচিতদের সাথে তাঁর সম্পর্কও অন্বেষণ করে।

উইলি লোমান এমন একটি চরিত্র, যে চরিত্রের মধ্যে আমেরিকার মধ্যবিত্ত জীবনের গল্প উঠে এসেছে। উইলি যে সেলসম্যানের চাকরি করে, তাতে তাঁর পরিবারের জন্য সামান্য উপযোগ যোগাতে সক্ষম। তাঁর স্বপ্ন নিজের স্ত্রী-সন্তানদের স্বাধীন জীবন যাপন ও প্রাচুর্য এনে দেবার। কিন্তু সে সফলতার দেখা পায় যেন প্রতিবেশী চার্লি ও তাঁর সন্তানের সফলতার মধ্যে, সে চায় নিজের ভাই বেনের মতো ভাগ্যের পরিবর্তন। 

উইলি যখন নিজের ব্যর্থতা আর পরিবারের ভারবহনে চিরক্লান্ত, তখন তারই ছোট ভাই বেন মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে পরিবার আর আপনজনের মোহ ত্যাগ করে ভাগ্যের সন্ধানে পাড়ি জমায় আফ্রিকায়, পরবর্তীতে হয়ে ওঠে ব্যাপক বিত্ত-বৈভবের অধিকারী। উইলি আশা করে, কোনো একদিন বেন ফিরে এসে তার জীবনযুদ্ধের কষ্ট লাঘব করবে, তাঁর সন্তানদের প্রতি স্নেহাশীর্বাদ রেখে তাদের দেবে সঠিক পথের সন্ধান। তারপর তাঁর ভাগ্য ফিরবে, জীবনে আসবে পরিবর্তন। সেই পরিবর্তন আনার চেষ্টাতে একদিন সে তাঁর জীবনের গল্পই পরিবর্তন করে ফেলে। 

আমেরিকান মধ্যবিত্ত জীবনের এই গল্পটি এমন এক সময়কার, যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ করে দেশটির অর্থনীতি নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে। গ্রাম ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতি হয়ে উঠছে শহরমুখী ও শিল্প-কারখানা নির্ভর। তীব্র পুঁজিবাদ সমাজে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। একদিকে ধনীরা দ্রুত আরো ধনী হচ্ছে, অন্যদিকে দ্রুতই নেমে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জীবনমান। মানুষের মূল্যবোধ দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে, পূর্বের ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসের ওপর প্রকট হয়ে ওঠে নতুন চিন্তাধারা। মুক্ত স্বাধীন জীবনের চেয়ে মানুষের কাছে তখন প্রিয় হচ্ছে বিত্ত-বৈভবে পূর্ণ জীবন। একে অপরের কাছে নিজেকে শ্রেষ্ঠতর প্রমাণ করার এক দুর্দান্ত প্রতিযোগিতা তখন সর্বত্র। সম্পদ আর প্রতিষ্ঠার ওপর ভিত্তিতে সামাজিক মূল্যায়ন প্রকট আকার ধারণ করেছে। এমনই এক সময়ের প্রতিনিধিত্ব করা নাটক আমেরিকান লেখক মিলারের 'ডেথ অব এ সেলসম্যান। 

গল্পের শুরু উইলির কর্মজীবনের ব্যর্থতার কথা দিয়ে। স্ত্রী'র সাথে রান্নাঘরের আলাপচারিতায় ফুটে ওঠে সেলসম্যান হিসেবে বৃদ্ধ উইলির ব্যর্থতার চিহ্ন, পাওয়া যায় স্বামী হিসেবে উইলির ব্যর্থতার পরিচয়। অন্য নারীর প্রতি পুরুষসুলভ আকর্ষণে যে উইলি বিশ্বাস ভাঙে স্ত্রী লিন্ডার, সেই উইলিই সহানুভূতি আর বিশ্বাসের খোঁজে আমৃত্যু নির্ভর করে স্ত্রী'র ওপর। 

দুই পুত্র বিফ আর হ্যাপি ভাগ্যের খোঁজে এদিক-ওদিক ঘোরে, কিন্তু উইলি ব্যর্থ হয় তাদের সঠিক পথ দেখাতে, ব্যর্থ হয় পুত্রের সামনে উত্তম পিতার উদাহরণ সৃষ্টি করতে। দুই ভাইকে পিতার সঙ্গের চেয়ে ছলনাময়ী অর্থলোভী নারীর সঙ্গ বেশি উপভোগ করে। এ যেন আজকের পৃথিবীর হাজারো নিম্নবিত্ত যুদ্ধরত পিতার আয়না। উইলির চরিত্র যেন আরো লাখো পরনারী প্রীত কিন্তু স্ত্রী'র প্রতি একান্ত নির্ভরশীল স্বামীর প্রতিচ্ছবি। 

পুঁজিবাদী পৃথিবীতে মধ্যবিত্তের মৃত্যু, আজকের বিশ্বের অর্থনীতিটাই যেন ভোগের, একে অপরকে ভোগ করবে বস্তুসামগ্রীর মতো, কোম্পানিগুলো নিজের শ্রমিকদের রক্ত-মাংস থেকে মন ও মনন পর্যন্ত চুষে খাবে, অতঃপর পরিত্যক্ত ছোবড়া ত্যাগ করে তাকাবে নতুন শ্রম বাজারের দিকে। এটাই যেন বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির পুঁজি তত্ত্বের লুকানো রহস্য। আর এই নিংড়ে নেওয়ার অর্থনীতির পরতে পরতে লুকোনো থাকে হাজারো-লাখো সাধারণ মানুষ ও তাদের পরিবারের গল্প, লুকোনো থাকে তাদের নানা রঙের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন ভাঙার কাহিনী। এ রকমই এক স্বপ্ন ভাঙার গল্প নিয়ে তৈরি আর্থার মিলারের 'ডেথ অব এ সেলসম্যান নাটকটি।


---

দলের ঘোষণা


থিয়েটারিয়ান প্রথমতঃ মহা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। ব্যক্তি, দল, রাষ্ট্র সকল ক্ষেত্রে এই নত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠান ঘটানোর তা নিয়ে ২০২০ সালের মহান বিজয় সেন-এর পথচলা শুরু। নাট্য প্রয়োগে নতুনত্ব, বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্য এবং আধুনিক বাংলা থিয়েটারের বিকাশে থিয়েটারিয়ানের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। যার মূল লক্ষ্য হবে বৈষম্যহীন, মানবিক সমাজ গঠন। বিয়েটারিয়ান সত্য এবং সুন্দরের পক্ষে দাঁড়িয়ে মেধা, মনন ও সৃজনের মাধ্যমে থিয়েটারকে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট থাকবে। সকল দলের নাট্যকর্মীদের পারস্পরিক মেলবন্ধন সৃষ্টিই হবে থিয়েটারিয়ানের অন্তরের অভিপ্রায়। মিয়োটারিয়ান শিল্পের সকল ক্ষেত্রে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিনো যাবে। তবে সবার আগে প্রাধান্য দেবে নাটক মঞ্চায়ন। দেশ-বিদেশের মানসম্পন্ন নাটক মঞ্চে আনবে থিয়েটারিয়ান। একটি প্রগতিকামী উদারনৈতিক দেশ গঠনের বার্তা দিতে থিয়েটারই হবে থিয়েটারিয়ানের প্রধান বাহন।


নির্দেশকের কথা


"খে অব এ সেলসম্যান প্রযোজনাটি দর্শকের সামনে শুধুমাত্র একটি নাট্যশিল্পকর্ম হিসেবে কখনই আমরা


উপস্থাপন করতে চাই না। বরং চেয়েছি পুঁজিবাদী সমাজে যেখানে আমাদের আবাস, সেখানে প্রতিমুহূর্তে যে


নিরন্তর লড়াই করে আমরা বেঁচে থাকার চেষ্টা করি বা মারা যাই- সেই ট্র্যাজিক বাস্তবতার নির্যাস কিছুটা হলেও


যাতে ধরা দেয়। পুঁজিবাদের বেড়াজালে যে সমাজের জন্ম, সেই সমাজে জনগনের অস্তিত্বের মাপকাঠি নিরূপিত


হয় টাকা, পালায়। আর এমন আত্মকেন্দ্রীক সমাজে বিতের কাছে যখন ব্যক্তির সত্য পরাজিত হয় তখনই নেমে আসে চরম ট্র্যাজেডি। আর্থার মিলার এই নাটকে সামন্ততান্ত্রিক চিত অত্যন্ত চেতনার ধারক ব্যক্তির জীবন সংগ্রাম, স্মৃতি, অনুশোচনা, বাবা-ছেলের বাৎসল্য ও টানাপোড়ন, নারী-পুরুষের সম্পর্কের দমনমূলক চিত্রের জটিলতা ইত্যাদি চিত্রণে পুঁজিবাদী সমাজকে উপস্থাপন করেছেন তৃষার্ত রাক্ষসরূপে। ফলে বাংলাদেশের মেট্রোপলিটন সমকালীন জীবন,


ৰাস্তবতায় এই নাট্যপ্রযোজনা হয়ে ওঠে আমাদের সমাজের, আমাদের সময়ের আয়না।


Stream of Consciousness ধারার রচিত নাটকটির কেন্দ্রীয় চরিত্রের অস্থিরতা, স্ববিরোধিতা, আশাবাদ


আর নৈরাশ্যের অস্থির দোলাচল, অতীতের ফ্ল্যাশব্যাক, সংসার সম্পর্ক-প্রেম ইত্যাদি প্রকাশে বাস্তববাদী অভিনয়


পদ্ধতির মনস্তাত্ত্বিক নির্যাসের সাথে যুতসই অনুসঙ্গী হয়েছে অভিব্যক্তিবাদী প্রকাশ। আর মঞ্চরূপে প্রয়োগ হয়েছে


সাজেস্টিভ রিয়েলিজম।


একজন সেলসম্যানের মৃত্যুর অর্থ কি একজন মানুষের মৃত্যু নয়? অর্থাৎ এই প্রযোজনার প্রতিটি পরতে পরতে পুঁজিবাদী সমাজে আমরা কিভাবে বেঁচে আছি আর কিভাবে মারা যাই- প্রতি মুহূর্তে সে বিষয়েই প্রশ্ন করে চলে। আমি কৃতজ্ঞ বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গণে নব্যতরঙ্গরূপে আবির্ভূত নতুন দল থিয়োটারিয়ানের প্রতি, আমাকে তাঁদের প্রথম প্রযোজনার নির্দেশক হিসেবে নির্বাচন করার জন্য। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রযোজনার সহকারী নির্দেশক ও আলোক পরিকল্পক, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক ধীমান চন্দ্র বর্মণের প্রতি। কারণ শিল্পসৃজনে নিঃসঙ্গতার অনুভূতিকে তিনি আমার আশেপাশে ভিড়তে দেননি কখনই। ধন্যবাদ নাটকের পোশাক পরিকল্পক কাজী তামান্না হক সিগমা এবং আবহ সঙ্গীত পরিকল্পক নাভেন রহমানসহ সকল কলাকুশলীবৃন্দ। হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা জানাই আমার সাহসী অভিনেতাদের প্রতি, যারা বিগত তিনমাস নানা সময়ে আমার অনুপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও নিরলস কাজ করে গেছেন অবিরাম।


ধন্যবাদান্তে


আশিকুর রহমান লিয়ন নির্দেশক ও মঞ্চরূপ

--

মঞ্চে


উইলি লোমান


লিন্ডা


বিফ লোমান বিফ লোমান (ছোট)


হ্যাপি লোমান হ্যাপি লোমান (ছোট)


বেন


হাওয়ার্ড


বার্নাড


বার্নাড (ছোট) স্টানলি


ফোরসাঈদ লেটা


রচনা


অনুবাদ


নির্দেশনা ও মঞ্চরূপ সহকারী নির্দেশনা ও আলোক পরিকল্পক : ধীমান চন্দ্র বর্মণ


: আশিকুর রহমান লিন


পোষাক পরিকল্পক আবহ সঙ্গীত পরিকল্প


আবহ সঙ্গীত প্রক্ষেপণ আলোক প্রক্ষেপণ


পোস্টার ডিজাইন


প্রকাশনা প্রচার


প্রযোজনা ব্যবস্থাপনা


: তৌহিদ বিপ্লব, ঊর্মিল মজুমদার


পলি চৌধুরী, তাসমি : মোঃ মাইনুল ইসলাম (তাওহীদ)


: রাম কান্ত মন্ডল শ্রীকান্ত


: আহমেদ সুজন


: নাজমুল নাঈম


: আমিরুল মামুন


: আব্দুল হাই


: তাসমিয়া মীম, পলি চৌধুরী


: আব্দুর রহমান সোহাগ


লিটু রায়


: পৃথু অভিষেক


: সায়েদুর রহমান (ন)


: ফারাবী জামান শেহজানী


: অনিলা অচিন


নেপথ্যে


: আর্থার মিলার।


: ফতেহ লোহানী।


: কাজী তামান্না হক সিগমা


[ নাতে রহমান


জনি সেন


: নাভেদ রহমান, ফারজানা মহুয়া : ধীমান চন্দ্র বর্মণ, রুহুল আমিন রাজা


: দেবাশীষ কুমার দে প্রশান্ত


বিগ্যান সোহাগ ৰত্ন + আবু হায়াত মাহমুদ, তৌহিদ বিপ্লব, আহমেনা ও না


আবেদিন মনির


1. মের মাইলা ইসলাম (


প্রবেশ পত্র


Death-


Salesman

--

PRESENTS


Death of a Salesman


BY ARTHUR MILLER TRANSLATED BY FATEH LOHANI


DIRECTED BY ASHIQUR RAHMAN LEEON ASSISTANT DIRECTOR: DHIMAN CHANDRA BARMAN


theaterianb@gmail.com -08 01844 925 010-85 03544 925 011, 01844 925 012


℗ theaterianled


www.theaterian.org


PRODUCTION: 01

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url